বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টমগ্রাম থানার আমদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ির আলকাছ মিয়ার ছেলে শহীদুল্লাহ মিয়া (৩৫ ) দীর্ঘ দিন যাবত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কস্হ এলাকায়ধীনে দিন-রাতে চালিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক পাচার !
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ভারতসীমান্ত ঘেষা পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিনাঞ্চল পাহাড় ও চা বাগান এখন মাদকের ট্রানজিট রুট। সারা দেশব্যাপী সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করলেও চোরকারবারীরা নির্জন পাহাড় ও চা বাগানকে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে বেঁচে নিয়েছে। ধর্মঘর, হরষপুর, শিয়ালউড়ি, মালঞ্চপুর, চৈতন্যপুর, চৌমুহনী ও শ্রীধরপুর, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, ২০নং সুরমা চা বাগান সীমান্ত এলাকায় তারকাটা বেড়া ভেদ করে বিশেষ কৌশলে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ঢুকছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তৎপর থাকলেও থামাতে পারছেন না মাদক পাচার। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান পরিচালিত হলে মাদক বহনকারী গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা তাকে ধরাছোয়ার বাহিরে।
মাদকের করাল চুবলে কোমলমতি যুব সমাজ থেকে শুরু করে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের সমাজের অগুনিত মানুষ।
স্কুল,কলেজ পড়ুয়া সন্তানরা অভিভাবকদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আড়ালে আবডালে থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন শত শত উঠতি বয়সের যুবক মাদক সেবনের জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় মোটর সাইকেল, কার, মাইক্রোবাস করে চলে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অভিভাবক জানান, মাদকের থাবা থেকে তাদের উত্তরাধিকারীদের রক্ষা কল্পে অশ্রু বিসর্জন করেন। একপর্যায়ে তিনি আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে আরো সোচ্ছার হবার কথা জানান। অন্যথায় মাদকের আগ্রাসন তরুন যুবসম্প্রদায়কে কোন অন্ধকারে নিক্ষেপ করবে তা ভাবাও যায় না। পরিনতিতে এসব উঠতি বয়সের যুবকরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ে চলে যেতে পারে।
ধর্মঘর ইউনিয়ন থেকে বাঘাসুরা ইউনিয়ন পর্যন্ত এ চক্রের প্রায় হাজারও সদস্য এ পেশায় সক্রিয় রয়েছেন। আর তাদের হাত ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার হচ্ছে ভয়ানক মনর নেশা মাদক।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টমগ্রাম থানার আদমপুর ইউনিয়নের ( চেয়ারম্যান বাড়ির) আলকাছ মিয়ার ছেলে শহীদুল্লাহ মিয়া (৩৫) নামে এক মাদক গডফাদারের ভয়ানক তথ্য, বেশ কিছু দিন যাবত সেই গডফাদার সুকৌশলে কোটি কোটি টাকার মাদক পাচার করে যাচ্ছে। কোথাও যদি মাদকের চালান আটকা পড়ে তাহলে দলীয় পরিচয় ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মন্নাফ এর আপন ভাতিজা পরিচয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দামাচাপা দিয়ে নিজকে আড়াল করে মাদক আটকের সংবাদটিও গোপনীয় রাখতে তার কোন সমস্যা হয়না। টাকার বিনিময়ে দামাচাপা দিয়ে দেন পুরো ঘটনা
এই বিষয়ে আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মন্নাফের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সে আমার কোন আত্মীয় নয়। আর কোথাও যদি আমার নাম পরিচয় দিয়ে আত্মীয় পরিচয় দেয় তাহলে, আমি প্রশাসনসহ সকল’কে বলছি কোন প্রকার ছাড় দিবেন না। কারন মাদকের বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ ঘোষণা অব্যাহত রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি একমত পোষণ করে মাদকের প্রতি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করছ। শহীদুল্লাহসহ আমার ইউনিয়নের কোন ব্যক্তি যদি আমার নাম পরিচয় ব্যবহার করে তাহলে মেরে হাত পা ভেঙে চুরমার করে দিবেন। আমি চাইনা কোন মাদক ব্যবসায়ী বা কোন গডফাদার আমাদের যুব সমাজসহ সমাজের ধ্বংসের কারন হয়ে থাকুক। আমার এলাকার কোন ব্যক্তি মাদকের সাথে জড়িত রয়েছে এমন তথা যদি কোন ব্যক্তির জানা থাকে, তাহলে সাথে সাথে প্রশাসনের নিকট অথবা আমার নিকট জানাতে পারেন। সমাজ ধ্বংসের হাত থেকে আপনি বাঁচুন আপনার সন্তানকে বাঁচান এবং যুব সমাজকে রক্ষা করুন এইটাই আমার অনুরোধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন কিছু ব্যক্তিরা জানান, আদমপুরের শহীদুল্লাহ প্রায় ২ থেকে ৩ বছর যাবত মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনায়সে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক পাচার করে যাচ্ছে। সে কখনো হাসের ফার্মের ব্যবসা, কখনো ডেজার মেশিনের ব্যবসার ফাঁদ পাতে। আর এই সুযোগে চালিয়ে যায় তার মাদক পাচারের কার্যক্রম। এমনি ভাবে দীর্ঘ দিন যাবত সে মাদক দ্রব্য পাচার করে যাচ্ছে।
আদমপুর ইউনিয়নে অনুসন্ধানে বেরি আসে শহীদুল্লার মাদক ব্যবসার অন্য রকম কৌশল। এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার জনচোখ আড়ালে রয়েছে জমজমাট মাদক মেলা। যার ফলে প্রশাসনের নজর থেকে সে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে।
শহীদুল্লাহ মাদক ট্রানজিটে ইয়াবা,গাজা, ফেনসিডিলসহ পাহাড়ি এলাকা থেকে ভাটি অঞ্চলের আদমপুর, কৌরল, বাজিতপুর, অষ্টমগ্রামসহ বেশ কিছু এলাকায় এই মাদক পাচারের সাথে জড়িত রয়েছে বলে অনেক তথ্য পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে।
অষ্টমগ্রাম থানার এক এস আই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ মাদক ট্রানজিট ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে এমন তথ্য অহরহ মিলছে। কিন্তুক সে সুকৌশলে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকে বিধায় তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি খুব বেশি দিন দিন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে থাকতে পারবেনা। খুব শীগ্রই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে আমারদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা জানান, সীমিত লোকবল পরিবহন সমস্যা ও দুর্ঘম পাহাড়ের কারণে অবৈধ চোরাচালান ব্যবসা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। মাদক চোরাচালান ব্যবসা করলেও চলাফেরা বেশভূষা দেখে বুঝার উপায় নেই তাদের নেতৃত্বে এ সীমান্তে হচ্ছে বড় ধরনের চোরা চালানের ব্যবসা। তারা নিজেকে রাখে সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
মাদক দ্রব্যের তালিকায় গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ইত্যাদি জীবনঘাতি পণ্য । এসব মাদকের ছড়াছড়ি এলাকায় সুস্থ মানুষদের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আর দিন দিন বাড়ছে অপকর্মের মাত্রা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারছে না পাঁচারকারীদের দমাতে। আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের দৃষ্টির অগোচরে যে সকল মাদকদ্রব্য সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে, তা রোধ করা খুবই কষ্টসাধ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, মাদক সমূহ অপকর্মের হোতা যারা তাদের বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের রয়েছে বিশাল মাদক বহনকারী সদস্য। অনেক সময় উঠতি বয়সের যুবকদের টাকার লোভ দেখিয়ে মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে। আছে গডফাদারও। এদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে নারাজ। কারন এ সকল অর্থলোভী অবৈধ মাদক সম্রাটদের মূল অস্তিত্ব খুবই মজবুত ও বহুদুর প্রসারিত।
প্রাণের ভয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকেন। এহেন পরিস্থিতিতে প্রশাসন অগ্রনী ভূমিকা নিয়ে জনগনকে সাথে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে না তুললে মাদকের করাল গ্রাস থেকে পরিত্রান পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অভিজ্ঞমহলের অভিমত, অনৈতিক ও অসামাজিক মাদক বানিজ্য অচিরেই বন্ধ না হলে আমাদের সমাজ জীবন এক মানবসৃষ্ট মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল সামিউন্নবী চৌধুরী সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাদক প্রসঙ্গে বলেন, সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের টহল জোরদার রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে বিজিবির অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স। মাদকের বিরুদ্ধে বিজিবি পাশাপাশি প্রত্যেকটি পরিবারের কর্তাকে মুখ্য ভুমিকা পালন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজিবি সীমান্তে অতন্দ্র প্রহীর মত কাজ করছে।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক আটক হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে। কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
সচেতন মহলের নাগরিকদের প্রশ্নঃ- আর কত মায়ের সন্তান ধ্বংসের পথে গেলে মাদক কারবারিরা শান্ত হবেন ? আর কত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন নষ্ট করলে মাদকের গডফাদাররা এই মাদক দ্রব্যের বাজার থেকে নেমে আসবেন ? কবে এই মরন নেশা মাদক আমাদের সমাজ থেকে বিদায় হবে?